এই লেখাটি পড়ছেন তার মানে আপনি ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গল ঘুরতে আগ্রহী এবং জানতে পেরেছেন মাধবপুর লেক সম্পর্কে। এখন চাচ্ছেন লেকটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে।

আমি কিছুদিন আগে ভ্রমণচারীর সাথে লেকটিতে গিয়েছিলাম এবং দীর্ঘক্ষন সময় কাটিয়েছিলাম।
সেরা অংশটা ছিল, সেখানকার চা বাগানের একজন কর্মচারীর কাছ থেকে লেকটি সম্পর্কে খুটিনাটি প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জেনেছিলাম।
আমার অভিজ্ঞতা ও অন্বেষিত তথ্যের আলোকে আপনাকে পুরো লেখায় জানাবঃ
শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন কারন লেখার একদম শেষে আপনাকে জানাব কিভাবে সবচেয়ে কম খরচে মাধবপুর লেকে যাবেন।
মাধবপুর লেক কোথায় অবস্থিত?
দর্শনীয় স্থান | মাধবপুর লেক |
অবস্থান | শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার |
পরিচিত নাম | মাধবপুর লেক/হ্রদ |
আয়তন | ৫০ একর। দৈর্ঘ্য ৩ কি.মি এবং গড় প্রস্থ ১৬৫ মিটার |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ২০৭ কি.মি |
ড্রোন উড়ানো যাবে কি? | কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে |
মাধবপুর লেক বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী খ্যাত সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। লেকটি শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর থেকে ১০ কি.মি পূর্বে এবং কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৫ কি.মি দূরে অবস্থিত।
মাধবপুর লেক কিভাবে যাবেন?
প্রথমে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল চলে আসুন। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল বাস ও ট্রেনে করে যাওয়া যায়। ট্রেনের শিডিউল আপনার পছন্দমত সময়ে নাও পেতে পারেন, বিধায় বাসে করে যাত্রায় শ্রেয়।

কল্যানপুর, আব্দুল্লাহপুর ও সায়েদাবাদ বাস স্টপেজ থেকে মৌলভীবাজারগামী বাস পাবেন। নন এসি বাসের ভাড়া ৩৯০-৫০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকা লাগবে। ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর কিংবা আব্দুল্লাহপুর রেল স্টেশন থেকে থেকে টিকেট রওনা দিতে পারবেন। আসনভেদ ট্রেনের ভাড়া ৩২০ থেকে ১০৯৯ টাকা পর্যন্ত।
শ্রীমঙ্গল বাস স্টপেজে নেমে সিএনজি কিংবা চান্দের গাড়ী ভাড়া নিয়ে মাধবপুর লেকে যেতে পারবেন। (৩০০-৪০০ টাকার মত নিতে পারে)
ভ্রমণচারী টিপস
কম খরচে যেতে চাইলে, এবং শুধুমাত্র মাধবপুর হ্রদটিতেই যেতে চাইলে সিএনজি রিজার্ভ না করে, শ্রীমঙ্গল- ভানুগাঁছ সড়কের লোকাল বাস কিংবা সিএনজিতে যেতে পারেন!
তবে, শ্রীমঙ্গল বেড়াতে গিয়ে শুধুমাত্র মাধবপুর লেক ঘুরতে যাওয়ার মত বোকামী না করাই ভাল। সেক্ষেত্রে, ৩-৪ একসাথে থাকলে ১০০০-১২০০ টাকায় সবগুলো স্পট ঘুরে দেখার জন্য সিএনজি ভাড়া নিবে। বেশ খরচ তাইনা? সাথে আবার ৪ জন একসাথে জোটানো ঝামেলার।
সব ঝামেলা ঝেড়ে ফেলে, আপনার একদম এই মুহুর্তে যাবার ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে একদম স্বল্প খরচে আমি একটা ট্যুর প্লান দিব।
মাধবপুর লেকে কি দেখবেন?

মাধবপুর লেকের মূল আকর্ষণ এর লেক। স্বচ্ছতোয়া জলে পরিপূর্ন ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫০-৩০০ মিটার প্রশ্বস্তের এই লেকের চমৎকার ল্যান্ডস্কেপ ও ঘিরে থাকা পাহাড় যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত সুন্দর মনে হয়। সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় করে তুলে ঘিরে থাকা পাহাড়গুলোর উপরের সারি সারি সবুজ চা বাগান। আর এই মোহনীয়তাকে শীতের অতিথি পাখি যেন পূর্ণতা এনে দেয়।
এক কথায় মনোমুগ্ধকর!
আর লেকের স্বচ্ছ ঝলমলে পানিতে লাল-নীল শাপলা দেখে এই সৌন্দর্যকে অপার্থিব বলে মনে হবে।

লেকের স্বচ্ছ জলে দেখা মিলেঃ
- বিভিন্ন জাতের হাঁস
- সরালি
- পানকৌড়ি
- জলপিপি প্রভৃতি জলচর
- ও পরিযায়ী পাখীর।
ভ্রমণচারী টিপস
টিলার উপর থেকে পুরো লেকের ল্যান্ডস্কেপ ভিউটা পাবেন। তাই, টিলার উপরে কষ্ট হলেও আরোহনের মূল্য উসুল করে। উপরে থেকে ছবি তোলার জন্য সুন্দর ভিউ ও পাবেন।
চিন্তার কারন নেই, দর্শনার্থীদের সুবিধার্তে লেক ও চা বাগান কতৃপক্ষ টিলা কেটে সিড়ি বানিয়ে দিয়েছে।
মাধবপুর লেক কেন বিখ্যাত?
মাধবপুর লেকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটা হল এর লাল ও নীল পদ্ম এবং স্বচ্ছতোয়া জল। আর, শীতকালে রঙবেরঙের অতিথি পাখির বিপুল সমারোহ!
তবে, আমার কাছে যে জিনিসটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে তা হল উঁচুনিচু-আঁকাবাঁকা টিলা ঘেরা লেকটির চমৎকার ভূদৃশ্য (ল্যান্ডস্কেপ) এবং চা-বাগানে ঘেরা লেকের চারপাশের মনোরম সবুজ প্রকৃতি।
৩০ সেকেন্ডে মাধবপুরে লেকের ইতিহাস
মাধবপুর হ্রদটি ১৯৬৫ সালে কৃত্রিমভাবে টিলায় বাধ দিয়ে নির্মান করা হয়।
চা বাগানের এসব লেককে প্রচলিতভাবে “ডাম্প” বলা হয়ে থাকে। ঢালু টিলার উপরে পানি জমা থাকেনা বিধায় তা সংরক্ষন করে চা চাষের প্রয়াসে এসব কৃত্তিম লেক তৈরি করা হয়ে থাকে। বস্তুত, ঠিক সে কারনেই এই লেকটি নির্মিত হয়েছিল।
মাধবপুর হ্রদটির আয়তন ৫০ একর যা দৈর্ঘ্যে ৫০ মিটার এবং স্থানভেদে প্রস্থ ৫০-৩০০ মিটার পর্যন্ত। লেকটির মালিকানা ন্যাশনাল টি কোম্পানির।
মাধবপুরে লেকের প্রবেশ টিকেট মূল্য ও সময়সূচী
মাধবপুর লেকের প্রবেশ টিকেট লাগেনা। শুধুমাত্র পার্কিংয়ের জন্য গাড়ীভেদে ২০-৫০ টাকা লাগে। লেকটি সকাল ৯ টা থেকে সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
কোথায় থাকবেন?
মাধবপুর লেকের একদম সাথেই কোনো রিসোর্ট বা হোটেল পাবেন না। তবে, লেকটি থেকে স্বল্প দূরত্বে কম খরচে সবচেয়ে ভাল মানের রিসোর্ট হলো “শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট ও মিউজিয়াম”। ৩০০০-৫০০০ টাকায় ভাল মানের কটেজ পাবেন (৩-৪ জন থাকতে পারবেন প্রতিটি কটেজে)।
স্বল্প ভাড়ায় হোটেল খুজলে টি টাউন হোটেলটিতে থাকতে পারেন। ১০০০-১২০০ টাকায় ২-৩ থাকার মত রুম পাবেন।
স্বাভাবিকের চেয়ে কমমূল্যে টি রিসোর্ট বুক দিন ভ্রমণচারীতে
চাচ্ছেন, আশেপাশে বিভিন্ন মানের সব রিসোর্ট সম্পর্কে জানতে?
তাহলে এই লেখাটি পড়ুনঃ শ্রীমঙ্গলের হোটেল ও রিসোর্ট সমূহের তালিকা
কোথায় খাবেন?
মাধবপুর লেকের আশেপাশে খাবার হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্ট পাবেন না। লেকটিতে দুপুর কাটানোর ইচ্ছা থাকলে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাবেন। শ্রীমঙ্গলে ভাল মানের দুইটা রেস্টুরেন্ট হলঃ
- পাঁচ ভাই রেস্তোরা;
- পানশি রেস্তোরা।
রেস্টুরেন্ট দুটিতে কম খরচে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। বিশেষ করে, বিভিন্ন স্বাদের ভর্তা-ভাজি ও ডাল সবার পছন্দের।
আর, পানশি রেস্টুরেন্টের স্পেশাল খিচুড়ি কিন্তু মিস করবেন না।
মাধবপুর লেকের আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ (লেকটি থেকে ৫-৬ কিমি দূরে অবস্থিত)
- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যন
- বাংলাদেশ চা জাদুঘর ও গবেষনা কেন্দ্র
সবচেয়ে কম খরচে মাধবপুর লেক ভ্রমণ প্লান
আপনি যদি একা (এমনকি ২-৩ জন মিলেও) শ্রীমঙ্গল যান আপনার দুই হাজারের উপরে খরচ হবে। ভুল করবেন না, এই খরচ শুধু ডে-ট্রিপেই হবে।
এই খরচ কমাতে পারেন শুধুমাত্র একসাথে ১০ বা তার অধিক সংখ্যক মানুষ একসাথে গেলে। তবে, সমস্যা হলো একসাথে ১০ জন দূরে থাক, দু’য়েক জনই পাওয়া দুস্কর।
কিন্তু, আপনি অন্য সবার মতো, সিজনাল ট্যুরিস্ট না; আপনি মন প্রাণ থেকে ভ্রমণ ভালবাসেন- কিন্তু আপনার আয় কম! তাই বলে কি, স্বল্প খরচে গ্রুপে করে ট্যুরে যাওয়ার জন্য বসে থাকবেন, মাসের পর মাসে?
আচ্ছা, কেমন হয় যদি ভ্রমণচারী আপনাকে একদম স্বল্প খরচে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের অফার দেয়? যেখানে আপনার-
- যাতায়াত
- খাওয়া-দাওয়া
- প্রবেশ টিকেট
সহ আনুষাঙ্গিক সকল খরচ নিয়ে ভাবতে হবেনা!
তাও যদি এই প্যাকেজ আবার ১৫৯৯ টাকায় হয়?
ঠিক ধরেছেন ভ্রমণচারী মাত্র ১৫৯৯ টাকায় শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ প্যাকেজ দিচ্ছে!
অবিশ্বাস্য?
ঝটপট এই ফর্মটা ফিলআপ করে ফেলে বুকিং নিশ্চিত করুন। (কাস্টম ট্যুর/ফ্যামিলি ট্যুর নিয়ে আলোচনা করতেও এই ফর্মটি পূরণ করুন)
ভ্রমণচারী রিভিউ
ভ্রমণচারী মাধবপুর লেককে ১০ এ ৭.৫ দিবে।
জানুন ভ্রমণচারী কিভাবে রেটিং দেয়?
শেষ ভাবনা
মাধবপুর লেক নিঃসন্দেহে মাধবপুর লেক অসাধারন একটি দর্শনীয় স্থান! টিলার উপর সারি সারি চা বাগানে ঘেরা স্বচ্ছতোয়া জলে পূর্ণ এই লেকটির সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ আপনাকে দীর্ঘক্ষন প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রশংসায় ব্যস্ত রাখবে।
যদিও ভ্রমণ বিষয়ক সবকিছু নিয়ে লিখতে আমার আনন্দ লাগে, তথাপি বেশ কষ্টও হয়। (জানেনই তো বাংলায় লেখা বেশ কষ্টকর)
তাই লেখাটি পড়ে আপনার ভাবনা কিংবা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানালে অসাধারন লাগে কেননা পাঠকদের সাথে কথা বলতে আমার অসম্ভব ভাল লাগে)
একটি ‘গুরুতর ভুল’ বাদ দিলে মাধবপুর লেক নিয়ে আপনার লেখাটি ভালো হয়েছে। জানিয়ে রাখতে চাই, মাধবপুর লেক মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বিষয়টি সংশোধন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
ভুলটি অনৈচ্ছিক এবং সংশোধন করেছি। ত্রুটিটি ধরিয়ে দেবার জন্য আপনার প্রশংসা করছি। সবসময় ভাল থাকুন।
অনেক ভালো একটি পোস্ট। পড়ে অনেক তথ্য জানতে পারলাম.